নওগাঁয় চালের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৯ই আষাঢ় ১৪৩২ রাত ০৯:৫৫:৩৩ (23-Jun-2025)
  • - ৩৩° সে:

ব্যবসা-বাণিজ্য

নওগাঁয় চালের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

২৩ জুন ২০২৫ সকাল ০৯:১৯:৩৭

সংবাদ ছবি

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভরা মৌসুমেও চালের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। তারা মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলেও চোখে মুখে অস্বস্তির ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দেশের ধান-চাল উৎপাদনকারী অন্যতম জেলা নওগাঁয় এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালরে দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। আর পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। প্রতি কেজিতে প্রকারভেদে বেড়েছে ৫-৬ টাকা।

চালের হঠাৎ এভাবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে একেকজন একেক মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন মিলারদের সিন্ডিকেট, কেউ বলছেন ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, আবার কেউ বলছেন সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

ভরা মৌসুমে মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় চালের এমন আকস্মিক দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা।

পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন মুঠোফোনে আক্ষেপ ও ক্ষোভ নিয়ে বলেন, বড় বড় বয়বসায়ীরা বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় বড় মিলারদের সাথে পেরে উঠতে পারছে না। এটা পুরো একটা সিন্ডিকেট। বাংলাদেশে যে ধান আছে, তা দিয়ে একবছর চলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আর বড় বড় ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ধান কিনে মজুদ করে রাখছে। আগে ৩ থেকে ৪টা অটোগাড়িতে চাল নিতাম। এখন ২০ বস্তা চাল পাচ্ছি না। কারণ, আমাদের কাছে তো আর বড় বড় ব্যবসায়ীরা খুচরাভাবে চাল দেবে না। তাই আমাদের আমদানি কমে গেছে। সরকারি নজরদারি না থাকার সুযোগে অতিরিক্ত মজুদ করছে তারা। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করার জোর দাবি জানালেন বাজারের খুচরা এই ব্যবসায়ী।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মেসার্স তাপস খাদ্য ভান্ডারের প্রোপাইটার তাপস কুমার মন্ডল বলেন, মিলাররা পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল দিচ্ছে না। ২০ বস্তার চাহিদা দিলে চাল দেয় ৫-৭ বস্তা। তার উপর বস্তা প্রতি ২০০-৪০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল মানভেদে গেলো সপ্তাহের চেয়ে ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভরা মৌসুমে বাজারে এভাবে চালের দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতের কারণেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

চালের আকস্মিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নওগাঁর আড়তদার পট্টির সততা রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু মজুতদাররা। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই করপোরেট ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে আসা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে। যার প্রভাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার মুঠোফোনে বলেন, চালের দাম সাধারণ ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ৬-৭ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানির। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। যার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমরা বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ চাই। এই জন্য আমাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর দৃশ্যমানভাব যেসকল মিলে অতিরিক্ত মজুদ আছে সেখানে অভিযান চালনো উচিৎ। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে চাইলে ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মুঠোফোনে বলেন, চালের দাম কী কারণে বেড়েছে এই জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। তারা যেন প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে যদি অপরাধ মনে হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ