পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, উত্তাল রাজপথ, হাসপাতালে হামলা
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৯ই আষাঢ় ১৪৩২ রাত ০৮:০৬:৪২ (23-Jun-2025)
  • - ৩৩° সে:

আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, উত্তাল রাজপথ, হাসপাতালে হামলা

১৫ আগস্ট ২০২৪ সকাল ০৮:৫৪:১১

সংবাদ ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যরাতে কলকাতা শহরে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচির মধ্যেই দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে আরজি কর হাসপাতালে। মেডিক্যালে পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ১৪ আগস্ট বুধবার রাজ্যজুড়ে যখন প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে, সেই সময় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে হঠাৎ করেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের কাছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি জানিয়ে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে। বিরোধীরা অবশ্য এই ঘটনায় তৃণমূলের হাত রয়েছে বলেই দাবি করেছে।

বুধবার রাত ১২টা নাগাদ আরজি কর হাসপাতালের সামনে রাত দখলের কর্মসূচি শুরু হয়। ঠিক তার পর পরই একদল উন্মত্ত ব্যক্তি আচমকাই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালাতে থাকেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল চত্বরে তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। কয়েক জন পুলিশকর্মী আহতও হয়েছেন হামলাকারীদের ছোড়া ইটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলাকারীদের অনেকেই রাতের মিছিলে ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁরা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন। আরজি করের ঘটনায় ‘বিচার চাই’ বলেও স্লোগান দিতে শোনা গিয়েছিল তাঁদের। হামলাকারীদের অনেকের গায়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা টিশার্টও ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘বিচার চাই’ বলে স্লোগান তুলে তাঁরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালাতে গেলেন কেন?

শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালের ভিতরে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের মঞ্চই বা ভেঙে দেওয়া হল কেন? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের কেউ কেউ হাফপ্যান্ট পরে এসেছিলেন। কেউ এসেছিলেন স্যান্ডো গেঞ্জি পরে। তা থেকেই অনেকের অনুমান, হামলাকারীরা কাছেপিঠেরই বাসিন্দা। তাঁদের অনেকের মুখ চেনা বলেও দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ। পুলিশের একাংশও মনে করছে, দমদম, টালা, সিঁথি ও দক্ষিণদাঁড়ি এলাকার কিছু লোকই এই কাজ করেছেন।

ঘটনার পর থেকেই প্রত্যাশিতভাবে একে অপরের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে শাসক ও বিরোধী। ‘রাত দখলের’ কর্মসূচিকে রাম-রাম কর্মসূচি বলে শুরু থেকেই কটাক্ষ করছিলেন তৃণমূলের একাংশ। রাতে সেই কর্মসূচির মাঝেই হামলার নেপথ্যে সিপিএম-বিজেপির হাত থাকতে পারে বলেই মনে করছেন শাসক শিবিরের কেউ কেউ। অন্য দিকে, গোটা ঘটনার দায় শাসক তৃণমূলের ঘাড়েই চাপিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুন্ডারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমাতে চেয়ে। শুভেন্দুর আরও দাবি, মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের মামলার তদন্তভার যেহেতু সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে, তাই তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য এভাবে হামলা চালানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের প্রথম নিশানাই ছিল জরুরি বিভাগ। কোলাপসিবল গেট ভেঙে তাঁর ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছেন তাঁরা। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে রড, ইট, পাথর! হাতের সামনে যা পেয়েছেন, তা-ই ভেঙেছেন হামলাকারীরা। কিন্তু জরুরি বিভাগের চার তলার যে সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ গত শুক্রবার উদ্ধার হয়েছিল, হামলাকারীরা সেখানে গিয়েছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

অনিলকুমার মণ্ডল নামে হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘আমরা এখানে যাঁরা ছিলাম, কোনও ক্রমে ছ’তলায় উঠে বেঁচেছি। হামলাকারীরা চার তলা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। দরজাও ভেঙেছে। কিন্তু সেমিনার হলের দিকে ওরা গিয়েছিল কি না, সেটা বলতে পারব না।’

চার তলায় থাকা পুলিশকর্মীদেরও দাবি, সেখানে কেউই উঠে আসেননি। পুলিশ সূত্রে দাবি, মূল ঘটনাস্থলে কেউ যাননি। তা অক্ষতই রয়েছে। সেই জায়গাটি নতুন বসানো আটটি সিসি ক্যামেরা নজরদারিতে রয়েছে। আগে ওই জায়গায় মাত্র দু’টি সিসি ক্যামেরা ছিল।

পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, তাদের মনোবল ভাঙতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পুলিশ ভিতরেও যেমন আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, তেমন বাইরের পরিস্থিতিও সামাল দিচ্ছে। পুলিশের কাজে বাধা দিতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন বাহিনীর একাংশ।

হাসপাতালে হামলার ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কমিশনার। এলাকা ঘুরে ‘ক্রুদ্ধ’ বিনীত বলেন, ‘ডিসি নর্থ প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’

এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিপি। তিনি বলেন, “কলকাতা পুলিশ কী করেনি! আরজি করের ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশ সব কিছু করেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে এই কথা বলছি। আমার সহকর্মীরা দিন-রাত এক করে দিয়ে এই তদন্তের কিনারা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা প্রমাণ সংগ্রহে কোনও রকম ত্রুটি রাখেননি। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। নানা রকম গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ ভুল প্রচারে কলকাতা পুলিশের সম্মানহানি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সিপি। 

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ১৩৮ বছরের পুরোনো আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ঘিরে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশ থেকে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিলোপের লক্ষ্যে বুধবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসের রাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ পালনের ঘোষণা দেন দেশটির নাগরিকরা। ‌‘মেয়েরা রাত দখল করো’ নামের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি ভারতজুড়ে পালন করার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। ইতোমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ-সমাবেশ শুরু হয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজার।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ







সংবাদ ছবি
ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের সদস্য ফরম বিতরণ
২৩ জুন ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:৩২:৪৫

সংবাদ ছবি
চুরি ছিনতাইয়ে জড়িত কিশোররা, আটক ২
২৩ জুন ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:২১:২৩


সংবাদ ছবি
বদলগাছীতে ফল মেলার উদ্বোধন
২৩ জুন ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:১০:০৬