ইয়াবাসহ আটক
  • ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৯ই আষাঢ় ১৪৩২ সকাল ১০:০৪:৫৭ (23-Jun-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

কুমিল্লায় ইয়াবাসহ আটকের পর যুবকের মৃত্যু

প্রতিনিধি কুমিল্লা: কুমিল্লার মুরাদনগরে বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে ইয়াবাসহ আটকের পর শেখ জুয়েল (৪৫) নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সে পেশায় একজন ইন্টারনেট ব্যাবসায়ী।১৯ জুন বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুয়েলের মৃত্যু হয়। তিনি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত ফখর মিয়ার ছেলে।মৃত শেখ জুয়েলের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে। তার মৃত্যুর পর নিজেদের কর্মী দাবি করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় বিএনপি। অন্যদিকে সে যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে দাবি করেন তার চাচাতো ভাই ও স্থানীয় চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন।পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে। তবে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।পুলিশ জানায়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরা বাজার ব্রিক ফিল্ড এর পূর্ব পাশে হেলালের বাড়ি থেকে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় আনা হয়। রাতে হাজতে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমার স্বামী ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পরপরই খবর পাই যে আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে আমার স্বামীর সাথে কথা বলতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। অনেক অনুরোধ করে তার সাথে দেখা করি।আগে থেকে অসুস্থ ছিলো কিনা এমন প্রশ্নে শিল্পী বেগম বলেন, আগে একবার স্ট্রোক করছিলো, তবে অনেকদিন ধরে সুস্থ আছেন।তিনি বলেন, রাতে খবর পাই আমার স্বামীকে মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। পুলিশ আমার স্বামীকে মেরে ফেলছে।জুয়েলের ছেলে শেখ সিহাব বলেন, বিনা অপরাধে পুলিশ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলছে। আমার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারেও পুলিশ আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে মৃত দেখতে পাই।এদিকে শেখ জুয়েলের মৃত্যুর পর তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চলছে ধুম্রজাল।মৃত শেখ জুয়েলকে নিজেদের কর্মী দাবি করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় বিএনপি।  জুয়েলের চাচাত ভাই বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই জুয়েল বিএনপির কর্মী। বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল আমিন তাকে ধরে নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় কল দিয়ে জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে মুরাদনগর হাসপাতালে আসতে বলেন। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।জুয়েলের আরেক চাচাতো ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, সে আমার সাথে যুবলীগের রাজনীতি করতো। জুয়েল পূর্বে একবার স্ট্রোক করেছিলো।মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে জুয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। আমরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়রা রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।  এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে জুয়েল গ্রেফতার হয়েছে। তাকে নির্যাতন করার অভিযোগটি সঠিক নয়।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) একেএম কামরুজ্জামান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার আরও ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে থানায় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, আটক জুয়েলকে পুলিশ নির্যাতন করেনি। অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।উল্লেখ অভিযানে শেখ জুয়েলসহ মোট ৫ জনকে মাদকসহ আটক করে পুলিশ। আটক অন্যরা হলেন, বাঙ্গরা উত্তর পাড়ার কনু মিয়ার ছেলে মো. হেলাল (৪২), হেলালের স্ত্রী শারমিন (৩৫), আজগর আলীর ছেলে খোকন (৪৫), দৌলতবাড়ি ড়্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে মো. হান্নান (২১)।